BetterSteps

নিপাহ ভাইরাস: প্রতিরোধ ও সচেতনতার মাধ্যমে জীবন বাঁচান

rodrigues fruit bat, bat, animal

পরিচিতি:
নিপাহ ভাইরাস একটি প্রাণঘাতী রোগ, যা সাধারণত ফলভূক বাদুড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। কাঁচা খেজুরের রস পান করা, দূষিত ফল খাওয়া, অথবা সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এলে এই ভাইরাস মানুষের মধ্যে ছড়ায়। শীতকালীন মৌসুমে, বিশেষত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাসে, বাংলাদেশে এই ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

সাম্প্রতিক ঘটনা:
২০২৪ সালে বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত পাঁচজনের সবাই মারা গেছেন, যা এই বছর ১০০% মৃত্যুহার নির্দেশ করে। ২০২৩ সালে ১৩ জন আক্রান্তের মধ্যে ১০ জন মারা যান, তখন মৃত্যুহার ছিল ৭৭%। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ সংক্রমণের ঘটনা কাঁচা খেজুরের রসের মাধ্যমে ঘটেছে। ফলে জনসাধারণকে এই রস পান থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করা হচ্ছে।

নিপাহ ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়:

  • প্রাণী থেকে মানুষে: ফলভূক বাদুড় নিপাহ ভাইরাসের প্রধান বাহক। তারা খেজুরের রস বা ফল খাওয়ার সময় সেগুলোকে দূষিত করে। এই দূষিত খাবার বা পানীয় গ্রহণ করলে মানুষ সংক্রমিত হয়।
  • মানুষ থেকে মানুষে: আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক তরল, যেমন লালা, রক্ত বা মূত্রের সংস্পর্শে এলে সংক্রমণ ঘটতে পারে।

লক্ষণসমূহ:
নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা দিতে পারে:

  1. প্রাথমিক পর্যায়ে জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, এবং পেশীতে ব্যথা।
  2. গুরুতর ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি, মাথা ঘোরা, খিঁচুনি এবং কোমায় যাওয়া।
  3. ভাইরাসটি এনসেফালাইটিস (মস্তিষ্কের প্রদাহ) সৃষ্টি করতে পারে, যা প্রায়ই মৃত্যুর কারণ হয়।

প্রতিরোধের উপায়:
নিপাহ ভাইরাসের কোনো নির্দিষ্ট টিকা বা চিকিৎসা নেই। তাই প্রতিরোধই একমাত্র উপায়।

  • কাঁচা খেজুরের রস পান এড়িয়ে চলুন: রস ফুটিয়ে পান করুন।
  • ফল ও শাকসবজি ভালোভাবে ধুয়ে নিন: দূষিত ফল এড়িয়ে চলুন।
  • সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন: রোগীর সেবা করার সময় গ্লাভস ও মাস্ক ব্যবহার করুন।
  • স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন: নিয়মিত হাত ধোয়া এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।

চিকিৎসা ও সচেতনতা:
নিপাহ ভাইরাসের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া এবং সহায়ক চিকিৎসা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও সতর্কতার মাধ্যমে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধ করা সম্ভব।

উপসংহার:
নিপাহ ভাইরাস একটি নীরব ঘাতক। এটি প্রতিরোধে আমাদের সচেতনতা ও সতর্কতা সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, কাঁচা খেজুরের রস এড়িয়ে চলা এবং সন্দেহজনক লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। একসাথে কাজ করে আমরা এই রোগের প্রাদুর্ভাব কমাতে পারি এবং জীবন বাঁচাতে পারি।

epidemic, coronavirus, lurking