BetterSteps

এইচডিএল কোলেস্টেরল: হৃদরোগ প্রতিরোধে এর গুরুত্ব এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট

Vibrant assortment of fresh vegetables in a bowl, perfect for healthy meals.

এইচডিএল কোলেস্টেরল কী?
এইচডিএল (High-Density Lipoprotein) কোলেস্টেরলকে “ভালো কোলেস্টেরল” বলা হয় কারণ এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল অপসারণ করে এবং ধমনীতে চর্বি জমতে বাধা দেয়। এটি লিভারে কোলেস্টেরল পরিবহন করে, যেখানে তা প্রক্রিয়াজাত হয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।

হৃদরোগ প্রতিরোধে এইচডিএল কোলেস্টেরলের ভূমিকা
১. ধমনী পরিষ্কার রাখা – এইচডিএল ধমনীর দেওয়াল থেকে এলডিএল (Low-Density Lipoprotein) বা “খারাপ কোলেস্টেরল” সরিয়ে ফেলে, যা ধমনী সংকীর্ণ হওয়া প্রতিরোধ করে।
২. অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রভাব – এটি প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
৩. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্যক্রম – এটি এলডিএল কোলেস্টেরলের অক্সিডেশন প্রতিরোধ করে, যা হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ।
৪. রক্ত সঞ্চালন উন্নত করা – উচ্চ এইচডিএল লেভেল রক্তের সঠিক প্রবাহ বজায় রাখে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে হৃদরোগের হার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার অন্যতম কারণ হলো খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রার ধরন, এবং অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস।

১. খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা – অধিকাংশ মানুষ ভাজাপোড়া খাবার, ট্রান্স ফ্যাট ও উচ্চমাত্রার শর্করা গ্রহণ করেন, যা এলডিএল বৃদ্ধি করে এবং এইচডিএল হ্রাস করে।
২. অলস জীবনযাপন – নিয়মিত ব্যায়ামের অভাব এবং দীর্ঘসময় বসে কাজ করার প্রবণতা এইচডিএল কমিয়ে দেয়।
3. ধূমপান ও ডায়াবেটিস – ধূমপান ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের কারণে এইচডিএল লেভেল কমে গিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
৪. জেনেটিক প্রভাব – কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণ এশীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই কম এইচডিএল থাকার প্রবণতা থাকতে পারে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

বাংলাদেশে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার সাথে মানানসই কিছু সহজ ও কার্যকর উপায় রয়েছে, যা ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। হৃদরোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ জীবনযাপনের জন্য নিচের পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করুন:


১. নিয়মিত হাঁটা ও শারীরিক পরিশ্রম করুন

  • প্রতিদিন ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটা বা সাইকেল চালানো HDL বাড়াতে সহায়ক।
  • গ্রাম বা শহরের যেকোনো জায়গায় হাঁটা সহজলভ্য এবং ব্যয়বহুল নয়।

২. ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ খান

  • বাংলাদেশে সহজলভ্য ইলিশ, রুই, পুঁটি, মলা, চিংড়ি প্রাকৃতিকভাবে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  • সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন এই মাছ খাওয়া উচিত।

৩. বাদাম ও বীজ যুক্ত করুন

  • চিনাবাদাম, কাজু, তিল, সূর্যমুখীর বীজ, কুমড়ার বীজ HDL বাড়াতে সহায়তা করে।
  • এগুলো সহজলভ্য এবং অল্প খরচে পাওয়া যায়।

৪. সরিষার তেল ও জলপাই তেল ব্যবহার করুন

  • রান্নায় সরিষার তেল ব্যবহার করলে শরীরের জন্য উপকারী মনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায়। (তবে, সরিষার তেলে ইরুসিক অ্যাসিড নামক একটি উপাদান রয়েছে, যা উচ্চ মাত্রায় গ্রহণ করলে স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, ইরুসিক অ্যাসিড হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, সরিষার তেল ব্যবহারের সময় পরিমিত পরিমাণে এবং সঠিক প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে এর উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে।)
  • যদি সম্ভব হয়, মাঝে মাঝে জলপাই তেল (Olive Oil) ব্যবহার করতে পারেন।

৫. শাকসবজি ও ফল বেশি খান

  • পালং শাক, কলমি শাক, ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া, গাজর ফাইবার সমৃদ্ধ, যা HDL বাড়ায়।
  • আমলকী, কমলা, পেয়ারা, আপেল, কলা সহজলভ্য ফল, যা রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৬. ধূমপান ও অতিরিক্ত চা-কফি এড়িয়ে চলুন

  • ধূমপান HDL কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়, তাই এটি ছাড়াই ভালো।
  • অতিরিক্ত চা-কফি না খেয়ে লেবু পানি, গরম দুধ বা গ্রিন টি খাওয়া ভালো।

৭. ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন

  • অতিরিক্ত ওজন থাকলে HDL কমে যেতে পারে, তাই শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
  • রাতে অতিরিক্ত ভাত না খাওয়া, পরিমিত পরিমাণে খাওয়া এবং সকালের নাস্তায় প্রোটিন রাখা সাহায্য করতে পারে।

হৃদরোগ প্রতিরোধে এইচডিএল কোলেস্টেরলের গুরুত্ব অপরিসীম। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারায় পরিবর্তন এনে, স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়িয়ে, এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে এইচডিএল বৃদ্ধি করা সম্ভব। এটি শুধু হৃদরোগ প্রতিরোধেই নয়, বরং সামগ্রিকভাবে সুস্থ জীবনযাত্রা নিশ্চিত করতেও সহায়ক হতে পারে।